অপারেশন পরবর্তী ব্যথা: চিকিৎসা এবং বিশেষ ওষুধে উপশম
যে কোনো অস্ত্রোপচার (Surgery) জীবনদায়ী বা জীবন-উন্নতকারী হতে পারে, কিন্তু অপারেশনের পর রোগীর মনে যে প্রথম উদ্বেগটি আসে, তা হলো ব্যথা। অপারেশনের স্থান এবং পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে এই ব্যথা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এই ব্যথা ব্যবস্থাপনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়, যাতে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
এই পোস্টে আমরা জানব অপারেশন পরবর্তী ব্যথা কেন হয়, এর চিকিৎসা পদ্ধতি এবং বিশেষ ওষুধ (স্পেশাল মেডিসিন ট্রিটমেন্ট) বা অ্যানালজেসিক পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে।
১. অপারেশন পরবর্তী ব্যথা কেন হয়?
অপারেশনের সময়, সার্জন যখন টিস্যু বা কলা (Tissue) কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন, তখন সেই স্থানে টিস্যুর ক্ষতি হয়। এই ক্ষতির ফলে শরীর প্রদাহ (Inflammation) শুরু করে, যা এক ধরনের প্রাকৃতিক আরোগ্যের প্রক্রিয়া। এই প্রদাহের সময় নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থগুলি স্নায়ুর প্রান্তকে উদ্দীপিত করে এবং রোগী ব্যথার অনুভূতি পান।
ভালো ব্যথা ব্যবস্থাপনা কেন জরুরি?
দ্রুত আরোগ্য লাভ
হাসপাতালে কম দিন থাকা
হাঁটাচলা এবং ফিজিওথেরাপিতে অংশগ্রহণে সুবিধা
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় (Chronic Pain) পরিণত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস
২. অপারেশন পরবর্তী ব্যথার চিকিৎসা (Pain Management)
অপারেশন পরবর্তী ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্তমানে একাধিক পদ্ধতির সমন্বয়ে চিকিৎসা করা হয়, যাকে মাল্টিমোডাল অ্যানালজেসিয়া (Multimodal Analgesia) বলা হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো বিভিন্ন প্রকার ওষুধের মাধ্যমে ব্যথার একাধিক পথে অবরোধ তৈরি করে ব্যথাকে নিয়ন্ত্রণ করা।
চিকিৎসা পদ্ধতির প্রকারভেদ:
ওরাল মেডিসিন (Oral Medicine): হালকা থেকে মাঝারি ব্যথার জন্য মুখে খাওয়ার ব্যথানাশক ওষুধ।
ইনজেকশন (Injections): তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে শিরায় বা পেশীতে ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।
রিজিওনাল ব্লক (Regional Block): অপারেশনের স্থানে বা সেই স্থানের স্নায়ু পথে চেতনানাশক ওষুধ ইনজেকশন দিয়ে ব্যথা অনুভূতিকে ব্লক করা হয়।
পেশেন্ট কন্ট্রোলড অ্যানালজেসিয়া (PCA): একটি বিশেষ পাম্পের মাধ্যমে রোগী নিজেই নিজের প্রয়োজন মতো শিরায় ব্যথানাশক ওষুধ নিতে পারেন, যা ডাক্তার দ্বারা নির্দিষ্ট মাত্রায় সেট করা থাকে।
৩. স্পেশাল মেডিসিন ট্রিটমেন্ট (বিশেষ ওষুধ ও পদ্ধতি)
আধুনিক ব্যথা ব্যবস্থাপনায় কিছু বিশেষ ওষুধ এবং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যা ব্যথার ধরন অনুযায়ী খুব কার্যকর:
গুরুত্বপূর্ণ নোট: ওপিওডস হলো শক্তিশালী ওষুধ যা ডাক্তার বা নার্সের তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করা উচিত। এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, বা ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে।
৪. ব্যথামুক্ত আরোগ্যের জন্য আপনার করণীয়
ব্যথা ব্যবস্থাপনার সাফল্যের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা খুব জরুরি:
সময়মতো ওষুধ নিন: ব্যথা চরম পর্যায়ে যাওয়ার আগে ওষুধ খেলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
সক্রিয় হোন: চিকিৎসক অনুমতি দিলে ধীরে ধীরে হাঁটাচলা এবং ফিজিওথেরাপি শুরু করুন। নড়াচড়া রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং আরোগ্যে সাহায্য করে।
যোগাযোগ করুন: আপনার ব্যথা যদি ওষুধ খাওয়ার পরেও না কমে বা অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যায়, তবে সাথে সাথে ডাক্তারকে জানান।
জিজ্ঞাসা করুন: আপনার ব্যথানাশক ওষুধের ডোজ বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা করবেন না।
অপারেশন-পরবর্তী ব্যথা নিয়ন্ত্রণ এখন একটি রুটিন চিকিৎসার অংশ। সঠিক চিকিৎসা এবং বিশেষ ওষুধের সমন্বয়ে আপনার সুস্থতার পথ হবে আরও মসৃণ এবং দ্রুত।
Subscribe
0 Comments